চারদিনের জাপান সফর শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৩১ মে) স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি টোকিও ত্যাগ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট স্থানীয় সময় আজ সকাল ১১টা ২০ মিনিটে সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে টোকিওর নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।’
তিনি জানান, সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা টোকিওতে প্রায় ২০টি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে একটি ছিল জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে বৈঠক।
আজাদ মজুমদার জানান, অধ্যাপক ইউনূস আজ রাত ১০টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সফরের তৃতীয় দিনে শুক্রবার (৩০ মে) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে, দুই নেতা চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যেকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন, যার মাধ্যমে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
জাপানি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা ও রেলপথ উন্নয়নের জন্য ১.০৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে, ওই দিন তিনটি চুক্তিপত্র বিনিময় হয়।
একই দিন, প্রধান উপদেষ্টা ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ বক্তৃতা দেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ মে), বাংলাদেশ ও জাপান দুইটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের কর্মশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জাপানে তাদের কর্মসংস্থান সহজতর করা, কারণ জাপানে শ্রমিক সংকট বিদ্যমান।
এই চুক্তিগুলো টোকিওর হিরাকাওচো চিয়োদা সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত মানবসম্পদ সেমিনারে স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অনুষ্ঠানে জাপানি কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ লাখ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান, যা দেশটির ক্রমবর্ধমান শ্রম সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে।
একই দিন প্রধান উপদেষ্টা ৩০তম নিক্কেই ফোরাম: ফিউচার অব এশিয়া-তে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
নিক্কেই ফোরামের পাশাপাশি, অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে সমর্থনের আহ্বান জানান।
এদিকে, শুক্রবার সোকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ইউনূসকে সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
২০০৪ সালে নিক্কেই এশিয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইউনূস গত ২৮ মে টোকিও এসে পৌঁছান।
প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেন। এরপর নভেম্বরে আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। গত ডিসেম্বরে ড. ইউনূস ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে মিশর সফর করেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। এরপর মার্চে চীন সফর করেন ড. ইউনূস। এপ্রিলে থাইল্যান্ড সফর এবং একই মাসে কাতার ও ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করেন প্রধান উপদেষ্টা। আর সবশেষ জাপান সফর করলেন তিনি।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে